শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন
ছবি:সংগৃহীত
নীলফামারী জেলার চিলাহাটিতে সকালে কুয়াশায় চাদরে মোড়ানো থাকে চারদিক। তারপর দেখা মেলে মিষ্টি রোদের।
রোদ শেষে আবার কুয়াশা, এ যেন অদ্ভুত এক সৌন্দর্য্যের মিলনমেলা।
এ সময়ে চিলাহাটির বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের অসাধারণ দৃশ্য।
ভোরে খেজুর রস আহরণের বিষয়টি বেশ বিস্ময়ের। খেজুর গাছকে বলা হয় ‘মধুবৃক্ষ’।
এ গাছ থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে রস আহরণ করা হয়।
সারা বছর ফেলে রাখা খেজুর গাছের যত্ন বেড়ে যায় শীতকাল আসলেই।
কারণ, খেজুর গাছ থেকে আহরণ করা সুমিষ্ট ও মূল্যবান রস দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়-পাটালি।
শীত আসছে আর শীত আসলেই প্রকৃতি সাজে নতুন রূপেতা ছাড়া শীতের সকালে এক গ্লাস খেজুরের রস আত্মার তৃপ্তি আনে। শীত যত বাড়ে খেজুর রসের মিষ্টিও তত বাড়ে।
শীতের আমেজকে বাড়িয়ে দিতে খেজুরের রসের তাই জুড়ি নেই।
শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
খেজুর গাছ কেটে পরিষ্কার করে শুরু করেন রস সংগ্রহ। খেজুরের রস সংগ্রহকারীরা প্রতিদিন বিকেলে নলি,
কোমরবন্ধ রশি সাথে নিয়ে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি ও হাড়ি (মাটির পাত্র)
বেঁধে রাখেন রসের জন্য। মাটির কলসিতে সারারাত রস জমে।
ভোরের আলো বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছিরা রস ভর্তি মাটির ভাঁড় নামিয়ে এনে এক জায়গায় জড়ো করেন।
পরে এই রস টিনের ট্রে (তাবাল) পাত্রে জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুড় মাটির ভাঁড় (হাঁড়ি) বা বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে রাখা হয়।
গুড় জমাট বেঁধে পাত্রের আকৃতি ধারণ করে। কখনও কখনও এর সঙ্গে নারিকেল কিম্বা তিল মিশিয়ে ভিন্ন স্বাদ দেওয়া হয়।
খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও বাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়।
সাধারণত চার বছর বয়সের পর থেকে খেজুর গাছের রস আহরণ শুরু হয় যখন গাছে ১২-১৫টি পাতা থাকে। খেজুরের চিনি,
গুণমান ইত্যাদির পরিমাণ মাটি, জলবায়ু এবং খেজুরের প্রকারের উপর নির্ভর করে।
পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে বেশি রস দেয় এবং রসও তুলনায় বেশি মিষ্টি হয়।
কেউ কেউ কাঁচা রস বাজারে বিক্রি করেন। শীতের সকালে অনেকেই গ্রামে কিনতে আসেন খেজুরের এ রস।
তারা বাসায় নিয়ে পিঠে, পায়েস রান্না করে সবাই মিলে খায়, অনেকে আবার মেয়ে-জামাইকে এ সময়টাতেই নিমন্ত্রণ জানায়।
প্রতি বছর হেমন্তেই শুরু হয় গাছিদের মহাব্যস্ততা। শীতকালজুড়েই তাদের এই ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়।
গ্রামীণ জনপদে খেজুর গাছ ও গাছিদের নিবিড় সম্পর্ক চোখে পড়ে। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে ঐতিহ্যের খেজুর গাছ কেটে গাছিরা রস আহরণ করেন।
দেশজুড়ে এ রসের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে শীতকালে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরেই খেজুর রস দিয়ে চলে পিঠা-পুলি তৈরির হরেক আয়োজন।
এক সময় অর্থকরী ফসল বলতে খেজুর গুড়ের বেশ কদর ছিল।
ব্রিটিশ আমলে খেজুর গুড় থেকেই তৈরি হতো চিনি। এ চিনি ‘ব্রাউন সুগার’ নামে পরিচিত ছিল।
খেজুরের রস থেকে উন্নতমানের মদও তৈরি করা হতো। এই চিনি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain
কমেন্ট বক্স